ঐ দিন রাতে সুবর্ণার কাজিনদের সাথে আড্ডা দিতে দিতেই ভোর হয়। তার কাজিনরা জানে আমি তার বয়ফ্রেন্ড। এইদিকে সুবর্ণা চোখ টিপ দিয়ে বলে দিলো যাতে আমি মাইন্ড না করি।সত্যি কথা বলতে প্রথম প্রথম বিরক্ত লাগছিলো পরে ভালই লাগছিলো। কি সুন্দর মিথ্যে গল্প শুনাচ্ছিলো সুবর্ণা তার কাজিনদের। এরকম করে কিভাবে মিথ্যে বলতে পারে?
.
- জানু আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো কবে???
- হ্যা..........
কথাটা শুনে হাসি পেয়ে গেছিলো। তবুও হাসি আটকিয়ে রেখেছিলাম অনেক।
- ভুলে গেছো তাই না??
- হুমম।
- তুমি তো ভুলে যাবেই।
- হুমমম তো তোমার তো মনে আছে তুমিই বলো।
.
মুখ ফসকে বের হয়ে গেছিলো। এখনি তুই করে বলে ফেলছিলাম। ভালই মিথ্যে নাটক বানাচ্ছিলাম দু'জনে। একটু পর আম্মু ফোন করে বাসা থেকে তাই তখন ঐ খান থেকে উঠে যাই।
.
- হ্যালো আম্মু।
- কিরে বাসায় গিয়ে পৌঁছাইছোত?
- হ্যা এসেছি।
- আচ্ছা কি করছিস এখন?
- এইতো বসে গল্প করছি সবার সাথে।
- আচ্ছা বেশি রাত জাগিসনা কিন্তু।
- আচ্ছা ঠিক আছে
- আচ্ছা তাহলে রাখি।
- হুমমম।
.
কথা শেষ করে আবার গেলাম সবার সামনে। যাওয়ার সাথে সাথেই সুবর্ণা বলা শুরু করলো।
.
- কে গো??
- আম্মু ফোন করেছিলো।
- ওহহহহহ কি বললো আম্মু?
- বললো তোমার খেয়াল রাখতে।
- আমাকে একটু দিলে না কথা বলতাম আম্মুর সাথে।
- কাল হইলো। আচ্ছা আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো।
- আজ ঘুমাতে পারবে না তো। আজ অনেকদিন পর সবাই একসাথে হয়েছি আজ সারারাত আড্ডা দিবো।
- ওহহহহহ।
.
কি আর করার বসে আছি আর তাদের কথা শুনছি। আড্ডা দিতে দিতে ফজরের আযান দিয়ে ফেলছে। তখন আর কোনোমতেই চোখ মেলে রাখতে পারছিলাম না। সুবর্ণা নামাজ পড়ে নিলো। আমি ভাবতেছি ও নামাজ পড়ে কবে থেকে?? কিন্তু আমি আর নামাজ পড়লাম না। ঘুমিয়ে পরলাম ১০ টায় ঘুম থেকে উঠলাম।
.
- নাদিম ।
- কি হইছে সকাল সকাল ডাকা-ডাকি করছিস কেন?
- উঠ ঘুম থেকে। ১০ টা বাজে দেখছোত।
- এত তাড়া-তাড়ি ১০ টা বাজলো কেমনে। সব দোষ তোর। তোর জন্যই ঠিক মতো ঘুমাতে পারিনাই।
- দোস্ত সরি। একটু তো নাটক করতে হবে। কি আর করার বল।
- আর কি কি জানে তারা?
- ওরা জানে তোর আর আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ।
- আল্লাহ্ এত কিছু বলে ফেলছোত। আমি আর এইসবের মধ্যে নাই বলে দিলাম।
- দোস্ত কয়েকদিনই তো। একটু কষ্ট করে বলিস।
- ধুরর। তুই এক নম্বর মিথ্যেবাদি।
.
উঠে পরলাম ঘুম থেকে। নাস্তা করে নিলাম পরে। তারপর বিকেলে হাটা-হাটি করলাম সবাই। কেনো জানি আসতে আসতে সুবর্ণার প্রতি ভাল লাগা সৃষ্টি হচ্ছে। এখন শুধু তাকে দেখতে চাইতো মন। মন চায় সারাদিন তার সাথে কথা বলি।বুঝতে পারছিনা তাকে কি আমি ভালবেসে ফেলেছি? অনেক ভেবে চিন্তে এইসব কথা মাথা থেকে নামালাম।
.
তবুও রাতে ঘুমাতে গেলে সুবর্ণার কথা মনে পরে। মনে পরে তার সেই দুষ্টামির কথা গুলো। এখন তার সাথে কথা বলতেও কেমন জানি লজ্জা লাগে। এখন আর তার সাথে ঝগড়া করতেও ভাল লাগেনা। তবে আমি শিউর যে সুবর্ণাও আমাকে পছন্দ করে। আর আমার আম্মুর সাথে সুবর্ণা অনেক ফ্রি ছিলো। আমি যদি কলেজে কোনো মেয়ের সাথে কথাও বলতাম ঐ টাও আম্মু যেনে ফেলতো।
.
আর সেই কথা গুলো জানার একমাত্র কারণই হচ্ছে সুবর্ণা। ও সব বলতো আম্মুর সাথে। আমি যদি ওর সাথে ঝগড়াও করি সেটাও আম্মুর কাছে বলে দিতো। পরে আম্মুর কাছ থেকে আমি বকা খেতাম। আর সবসময় আম্মু আমার সামনে সুবর্ণার প্রশংসা করতো। যেটা আমার একটুও ভাল লাগতো না। এখন সেই সব কথা গুলো মনে পড়লে খুব ভাল লাগে।
.
৫ দিন পরঃ
এই কয়েকদিনে সুবর্ণার প্রতি ভাললাগা আরো বেশিই বেড়ে যায়। ও কিছুটা বুঝতে পেরেছে। এখন আর তার সাথে ঝগড়া করিনা। অল্পতেই তার সাথে রেগে কথা বলিনা। এইদিকে সুবর্ণার আম্মুও এসে পড়েছে গতকাল। আর আজ সুবর্ণার মামার গায়ে হলুদ। আমি তাড়া-তাড়ি রেডি হয়ে ছিলাম।
.
সুবর্ণা এবং তার কাজিনরা হলুদ রংয়ের শাড়ি পড়েছে।সুবর্ণাকে শাড়িতে অনেক ভাল মানায়। আমি তো হা করে তাকিয়েই ছিলাম তার দিকে। কিছুতেই যেনো চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। একটু পর আমার সামনে আসে সে।
.
- কি খুব তো বলতিস শাড়ি পড়ার জন্য। আজ পড়েছি এখন বল কেমন লাগছে আমাকে ।
- অসাধারণ লাগছে। যদি কপালে টিপ পড়তি তাহলে আরো ভাল লাগতো।
- টিপ পড়ছিলাম তো। মনে হয় পড়ে গেছে।
- হাহাহা। বোকা ।
- আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাসা করি?
- হুমম কি বলবি বল।
- না থাক কিছু না।
- বলনা প্লীজ।
- না বলবো না।
.
না বলেই চলে গেলো হাসি দিয়ে। আমি তো তার প্রতি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। কখনো তো এসব ভাবিও নেই। কিন্তু এখন কেনো এইসব নিয়ে ভাবি। সারাক্ষণ তাকে নজরে রাখি। অবশ্য সুবর্ণা আড়ালে বুঝে যেত কিভাবে যেনো। আর যখনই তার সামনা - সামনি পরে যেতাম তখনি অন্যদিকে তাকিয়ে চলে যেতাম। এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো আমার আর সুবর্ণার দিন-কাল।
.
.
🔹চলবে 🔸
Comments
Post a Comment