- কান্না করে চেহারার কি অবস্থা করেছো দেখছো?
- তুমি তো আমাকে কাঁদিয়েই খুশি হও।
- কি বললি?? আমি তোকে কাঁদিয়ে মজা পাই?
- হুমমম।
- ভাল হইছে। এখন যা ফ্রেশ হয়ে নে।
- আগে সুন্দর করে বলো। তাহলে করবো।
- আচ্ছা বললাম। যাও এখন ।
- আচ্ছা যাচ্ছি। তুমি একটু দাঁড়াও এখানে।
.
পাগলিটা কে যতই দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। এত পাগল হলাম কিভাবে তার জন্য। কখনো তো এইসব কল্পনাও করিনি।ভাবতেই ভাল লাগে সে এখন আমার প্রেমিকা। শুধু মাঝে মাঝে তার পাগলামিটা অনেক বিরক্ত লাগতো। তার যখন যা ইচ্ছে হতো তাই করেই ছাড়তো।
.
আর এমনিতে খুদাও লেগেছে অনেক। ও আসলে একসাথে খেতে বসবো। আর ওর সাথে বসে খাওয়া মানে মাথা গরম হওয়া। এত ধীরে ধীরে খায় সে যে আমি ৫ বার খাওয়া শেষ করে ফেলতে পারবো। আগে ছিলো ফ্রেন্ড আর এখন তো গার্ল ফ্রেন্ড। এখন বিরক্ত নাও হতে পারি।
.
- এই আসো।
- এত তাড়া-তাড়ি তৈরী হয়ে গেলে?
- ক্যান আমি কি খুব বেশি স্লো?
- তা নয়। কিন্তু।
- কিন্তু কি??
- নাহ কিছু না।
- বলো কি।
- না বলবো না।
- প্লীজ বলো।
- আই লভ ইউ।
- আই লভ ইউ টু। কিন্তু কি বলো।
- খুদা লাগছে চলো খেয়ে নেই।
- আচ্ছা চলো যাই।
.
আমি, সুবর্ণা এবং তার কাজিনরা একসাথেই বসলাম। অবশেষে তার কাজিনদের সাথে মিথ্যে বলাটা এখন সত্যিই হয়েছে। এখন আর অভিনয় করতে হচ্ছে না মিথ্যে বলার জন্য। আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে সুবর্ণা তার নিজ হাতে। ঐদিকে তার কাজিনরা হাসা-হাসি করছে সুবর্ণার কাহিনী দেখে।
.
তখন একটু লজ্জা পেয়েছিলাম। তবে ভাল লাগছিলো অনেক।প্রিয় মানুষের হাতে খাওয়া যে কতটা মধুর তারাই জানেন যারা এরকম পেয়েছেন। তবে আমি তাকে খাইয়ে দেইনি। কারণ লজ্জ্বা ছিলো আমার অনেক বেশি। আবার সবার সামনে খাইয়ে দেয়া অসম্ভব।
.
খাওয়া শেষ করে বিকেলে সবাই বের হলাম ঘুরতে। গেলাম নদীর পারে নৌকা দিয়ে ঘুরলাম। বাহ বেশ মজার মূহুর্ত ছিলো।সে আমার পাশে বসে আছে হাতে হাত রেখে। সাথে তার মিষ্টি হাসি। ওহহহহহ অসাম লাগছিলো।
.
- কি গো এভাবে তাকিয়ে কি দেখো?
- তুমি এত কিউট কেনো??
- কই কিউট। পেত্নীর মতো লাগছে।
- আসলেই পেত্নীর মতো লাগছে । <মজা করে>
- কিহ আমি পেত্মী??
- হুমম পেত্মীর মতোই তো।
- হুহহহহ। কথা বলবে না আমার সাথে ।
- আচ্ছা। বলবো না।
.
রাগ করে চলে যাচ্ছিলো। সেই সময়ই তার হাতটি ধরে ফেললাম। কাছে নিয়ে জড়িয়ে ধরি।
.
- এই পাগলি তুমি আমার পেত্মী বউ।
- হইছে আর ঢং দেখাতে হবে না।
- বউয়ের সাথে ঢং না করলে আর কার সাথে করবো বলো।
- ইশশ রে। হইছে হইছে। এইবার ছাড়ো কেউ দেখে ফেলবে।
- উঁহু ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।
- সবসময় এভাবে তোমার বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখবে?
- হুমম সবসময়।
- ভালবাসি খুব
- আমিও গো।
- উম্মাহ।
- পাগল একটা।
- তোমার জন্য। হইছে হইছে এখন ছাড়ো প্লীজ।
- আচ্ছা ছেড়ে দিলাম।
.
এভাবে আরো দুইটা দিন কাটিয়ে দেই তার নানু বাড়িতে।এইবার বাড়ি ফেরার পালা। কিন্তু কেনো জানি আসতে মন চাইছিলো না ঐখান থেকে। সবাইকে কেমন জানি অনেক আপন ভেবে ফেলেছি অল্প কিছু দিনেই। বিকেলে রওনা দিলাম আন্টি, আমি আর আমার সুবর্ণা। সেইদিন অনেক বৃষ্টি হচ্ছিলো।
.
বাসে উঠে পরলাম। প্রায়ই ভিজে গেছিলাম সবাই। আন্টি আর সুবর্ণা এক সিটে বসে আমি তার বিপরীত পাশের সিটেই বসি।কিন্তু সেদিন আর সুবর্ণার পাশে বসতে পারলাম না। কিন্তু আড়াল চোখে দেখে যাচ্ছিলাম দু'জন দু'জনকে। এই দিকে বৃষ্টির উৎপাত বাড়তেই চলেছে। ভালই লাগছিলো তখন।
.
মাঝ পথে আসার সময় বাসের স্পীডটা হঠাৎ বেড়ে গেলো। এই বৃষ্টির মধ্যে এমনিতেই রাস্তা ভিজে গেছে তার সাথে আবার বাসের স্পীড বাড়লো। সবাই ড্রাইভারকে গালাগালি করছিলো। কিন্তু পরে জানতে পারি ব্রেক নষ্ট হয়ে গেছে। সবাই তো কান্না শুরু করে দিলো।
.
কিছুক্ষন পর জ্ঞান ফিরে আমার। তখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। মাথার মধ্যে ব্যান্ডেজ হাত পায়ে ব্যান্ডেজ। পরে জানতে পারি আমরা যে বাসটা দিয়ে যাচ্ছিলাম সেই বাসটা রাস্তার এক ছোট নদীতে পরে যায়। তখন রাত প্রায় ৯:০০ টা।
.
আমার জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে মা-বাবাকে দেখতে পেলাম আমার পাশে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম সুবর্ণা কোথায়। কিন্তু তারা চুপ-চাপ দাঁড়িয়ে আছে। কিছুই বলছে না। আমি চিৎকার চেঁচামিচি করতে ছিলাম। শুধু বলতে ছিলাম সুবর্ণার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
.
পরে জানতে পারি ঐ বাসের ড্রাইভার সহ ১৮ জন যাত্রী নিহত হয়েছে। আর বাকি যাত্রী আহত হয়েছেন। তার মাঝে আমিই খুব বেশি আহত হয়েছিলাম। অল্পের জন্য বেঁচে যাই। কিন্তু তখন পর্যন্ত ও সুবর্ণাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। পরে আমি বেড থেকে উঠে পরি। এইদিকে আমার ব্লাড পড়তে শুরু করলো।
.
বাহিরে বের হতেই দেখি আন্টিকে। কিন্তু সুবর্ণাকে দেখতে পারছিনা। আমি ভাল মতো দাঁড়াতে পারছিলাম না তবুও সামান্য দৌঁড়ে আন্টির কাছে যাই। আন্টির কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি সুবর্ণার কথা। আন্টি কান্না করে দিলো আমাকে জড়িয়ে নিয়ে। আমার আর কিছু বুঝতে বাকি রইলো না।
.
আমি সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যাই তখন। এর দুইদিন পর জানতে পারি ঐ ১৮ জন যাত্রীর মধ্যে আমার সুবর্ণাও ছিলো। কথাটা শুনার সাথে সাথে মনে হলো মাথার উপরের আকাশটা আমার মাথার উপর ভেঙে পড়লো।
.
গল্পটি আমার এক ফেসবুক ফ্রেন্ডকে উৎসর্গ করে লেখা। প্রায় দুই বছর হলো সুবর্ণা সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে। গল্পটি লিখতে গিয়েও অনেক কান্না করেছি। কিন্তু বাস্তবতার সাথে মিলেই চলতে হয়। সবাই দোয়া করবেন সুবর্ণার জন্য।
.
.
🔸সমাপ্ত🔹
Comments
Post a Comment