ফেসবুকে নিউস ফিড দেখতেছিলাম। কি আর করার ফেসবুকে নিউসফিড দেখা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। সিংগেল মানুষ তো তাই। এর মাঝে অনেকের রোমান্টিক পোস্ট দেখে দেখেই কাটিয়ে দিতাম। আর ভাবতাম ইশশ কবে যে কেউ একজন আসবে আমার জীবনে। যে এসে আমার শুন্য জীবনটা রাঙিয়ে দিবে ভালবেসে। এভাবেই ভেবে ভেবেই কাটছিলো।
.
আমার আবার গল্প পড়তে খুব ভাল লাগতো। সারাদিন গল্প পড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। কেনো জানি বিশেষ করে রোমান্টিক গল্প গুলা অনেক ভাল লাগতো। রোমান্টিক গল্পের মাঝে লুকিয়ে থাকতো হাজার ভালবাসা। কেনো জানি খুব বেশি ভাললাগতো। যে গল্পটাই পড়তাম পড়ার শেষে চোখ বুঝে নিজেকে ঐ গল্পেত হিরো চরিত্রে নিজেকে ভাবতাম।
.
একদিন গল্প পড়তেছিলাম এমন সময় সুবর্ণা ফোন দিলো। সুবর্ণা ছিলো আমার ছোট বেলার বান্ধবী। একসাথেই দুষ্টামি, বাঁদরামি সবকিছুই করতাম। আমরা দু'জনে খুব ভাল বন্ধু ছিলাম। আজ আমাদের বন্দুত্বের ১০ টা বছর পূর্ণ হলো। এই ১০ বছরে মনে হয়না আমরা কোনদিন ঝগড়া না করেছি। একটা দিনও ঝগড়া ছাড়া চলতো না।
.
- কি রে কুত্তা ফোন ধরতে এতক্ষণ লাগে তোর??
- আরে বাথরুমে ছিলাম। ফোনের আওয়াজ পেয়ে তাড়া-তাড়ি চলে আসছি। <মজা করে>
- ছিহ,,, বাজে কথা। তুই আর কখনো ঠিক হইলি না।
- হুমম ঠিক হইতামও না।
- তুই তো এমনিতেই ঘার তেরা। তুই কেমনে ঠিক হইবি।
- কি আমি ঘার তেরা?? তুই কি তাহলে! তুই তো হাতির বাচ্চা।
- খবরদার হাতির বাচ্চা বলবি না আমায়।
- তাহলে কি কইতাম <বলতাম> ??
- কিছু বলবি না।
- আচ্ছা বলবো না।
.
ফোন কেটে দিছে রাগে। বুঝতেই পারছেন ঝগড়া আমাদের মাঝে কিভাবে আগলে আছে। আমিও গল্প পড়া শুরু করে দিলাম। গল্প পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভেঙে যায় মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজে। মোবাইলের স্কীনে তাকিয়ে দেখি সুবর্ণার নম্বর। মনে মনে ভাবলাম সকাল সকাল ঝগড়া করার জন্য ফোন দিয়েছে নাকি। রিসিভ করলাম ফোন।
.
- হ্যালো নাদিম ।
- হ্যা বল। <ঘুম ঘুম কন্ঠে>
- দোস্ত কেমন আছিস?
- সকাল সকাল ফোন দিয়া আজাইরা পেঁচাল পারতাছোত ক্যান? কিসের জন্য ফোন দিয়েছিস ঐটা বল।
- তুই আসলেই একটা ডিস্টার্ব। আম্মু তোর সাথে কথা বলবে তাই ফোন দিয়েছি ।
- কি কথা বলবে আন্টি। আবার আমার সাথে।
- নে কথা বলে দেখ ।
.
- হ্যালো। আসসালামু ওয়ালাইকুম। কেমন আছেন আন্টি?
- ওয়ালাইকুম সালাম। এইতো বাবা ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?
- জ্বি আন্টি ভাল আছি।
- নাদিম আজ সুবর্ণার সাথে ওর নানুর বাসায় যেতে পারবে?
- আজ?
- হ্যা। আসলে সুবর্ণার মামার বিয়ে তো তাই। আর আমি আজ যেতে পারছিনা। তোমার আংকেল একটু রাজশাহী গেছে অফিসের কাজে। তাই তোমার আংকেল না আসা পর্যন্ত আমিও যেতে পারছিনা। এক সপ্তাহ পরই সুবর্ণার মামার বিয়ে। তাই আগেই যেতে হবে ঐখানে।
- হুমম বুঝলাম আন্টি। কিন্তু ...
- কোনো কিন্তু নয়। আমি তোমার আম্মুকে বলে দিচ্ছি।
.
আমার আম্মু এবং সুবর্ণার আম্মু ছিলো বান্ধবী। পরে সুবর্ণার সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর জানতে পেরেছি যে আম্মুর বান্ধবীর মেয়ে।
.
- আচ্ছা ঠিক আছে আন্টি। আসসালামু ওয়ালাইকুম।
- ওয়ালাইকুম সালাম। বিকেলে রেডি হয়ে থেকো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
.
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। একটু পর আম্মু এসে বলে যায় যাওয়ার জন্য। এক সপ্তাহ থাকবো তাই আম্মু অনেক গুলো ড্রেস গুছিয়ে রাখলো ব্যাগের মধ্যে। আমিও সকালের নাস্তা করে একটু বাহিরে যাই আড্ডা মারতে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম ২ দুপুর টা বাজে। এসে গোসল করে খেয়ে নিলাম। খাওয়া শেষ করে একটু শুয়েছি এমন সময় সুবর্ণার ফোন।
.
- কিরে কি করছিস?
- এই সময় মানুষ কি করে??
- কতো কিছুই তো করে। তুই কি করিস সেটা বল।
- আচ্ছা বাদ দে। কেনো ফোন করছোত?
- দোস্ত ইমো তে যা একটু। দেখতো কোন ড্রেসটা পরবো।
- তোর যেটা ভাল লাগে সেটাই পর ।
- না না প্লীজ দোস্ত একটু বল না।
- আচ্ছা ইমো তে যেয়ে নেই। ফোন কাট ।
.
ফোন কেটে ইমো তে গেলাম। ৫ টা ড্রেসের ছবি পাঠিয়েছে। আমার আবার নীল এবং কালো রংটা খুবই পছন্দের ছিলো। তাই এই দুইটা রং চোখে পড়ে যায়। কিন্তু এমনিতে শাড়ি পড়লে মেয়েদের অনেক ভাল লাগে। তাও যদি নীল রংয়ের শাড়ি হয় তাইলে তো কথাই নাই।
.
- কিরে বল?
- একটাও সুন্দর না। <একটু মজা করে বলি>
- হুহহহহ তোর চোখ থাকলে তো বুঝবি কোনটা সুন্দর কোনটা অসুন্দর।
- হইছে ভালা হইছে।
- হুহ।
- তোর নীল রংয়ের শাড়িটা পড় ভাললাগবে।
- হো শাড়ি পড়তে পারিনা।
- আন্টিরে বল পড়িয়ে দিতে ।
- যাহ পড়তাম না।
- না পড়লে নাই।
- আচ্ছা বায়। কারেক্ট পাঁচটা বাজে আমাদের বাসায় আসবি ।
- এহহ পাড়তাম না।
- না আসলে তোর আম্মুই তোরে জোর করে পাঠাবে।
- আচ্ছা যামুনে। তুই তাড়ি-তাড়ি রেডি হইয়া থাকবি।
- আচ্ছা। এইতো ভাল ছেলে।
.
ফোন রেখে দিলাম। এবং পরে ভাবতেছি এই সাতটা দিন কিভাবে সয্য করবো তাকে। যাইহোক নিজেকে একটু ধৈর্য করে রাখবো। একটু ঝগড়া করা কমিয়ে দিবো সাত দিনের জন্য। আর সুবর্ণা এমনিতে অনেক ভাল একটা মেয়ে। দেখতে অনেক সুন্দরী। প্রতিদিনই অনেকেই প্রোপোজাল করে থাকে। কিন্তু কাউকেই পাত্তা দিতো না। আমি একটু ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। পরে রেডি হয়ে গেলাম সুবর্ণার বাসায়।
.
.
🔹চলবে🔸
Comments
Post a Comment