হৃদয় এবং তিন্নির ভালবাসা জমিয়ে কেটে যাচ্ছিলো। তার সাথে কেটে যাচ্ছিলো পিয়াস,হৃদয় ও নাদিমের বন্ধুত্ব। কিছুদিনের মধ্যেই তিন্নি ভাবি ডাকে উপাধি পেয়ে যায়। স্কুলের সকলেই জেনে যায় হৃদয় এবং তিন্নির সম্পর্কের কথা। তিন্নি যেখানেই যায় সেইখানেই ভাবি নামটাই শুনতে পায়।
.
এতে তিন্নি প্রথমে বিরক্ত হলেও পরে আর বিরক্ত হয়না। তখন তার ভাবি ডাকটা শুনতেই ভাল লেগে যায়। তিন্নি থেকে ভাবি ডাকটা একটা পর্যায় তার নতুন নাম হয়ে যায়। কেউ তিন্নি বলে ডাকছে না সবাই ভাবি বলেই ডাকছে। ভাবি ডাকটা শুনলে খুব খুশি হয়ে যায়।
.
এভাবে চলতে চলতে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে সপ্তম শ্রেণীতে উঠে যায়। সেইদিনটি ছিলো তিন্নিকে দেখার প্রথম দিন। ঐ দিনেই হৃদয় প্রথম তিন্নিকে দেখে। তাই তিনি স্কুলে পার্টি দেয়। পার্টিটা হলো পান খাওয়া। মানুষ পার্টি দেয় অনেক কিছুর। কেউ যে পান পার্টি দেয় সেটা ঐদিনই জানতে পারে।
.
সবার মুখে পান। কেউ মিষ্টি জর্দা দিয়ে খাচ্ছে আবার কেউ অন্য জর্দা দিয়ে খাচ্ছে। সবার মুখ লাল হয়ে আছে। শুধু মুখ নয় দেয়ালটাও লাল হয়ে আছে পানের চিপটি দিয়ে। ক্লাসে স্যার আসে। তার নাম রফিক মিয়া। সেইরকম পানখোর ছিলেন তিনি। তাকে কেউ এক খিলি পান কিনে দিয়ে ছুটি চাইলে সাথে সাথে ছুটি দিয়ে দিতো। বিশেষ করে পিয়াস, নাদিম এবং হৃদয় এই কাজ গুলো বেশি করতো।
.
একটা সময় রফিক মিয়া থেকে রফিক কেটে পান যোগ করে দেয় ছাত্ররা। এর পর থেকে রফিক মিয়ার নাম হয়ে যায় পান মিয়া। তিনি ছিলেন স্কুলের হেডমাস্টার। তবে তার নামের উপাধিটা কে দিয়েছে বা কারা এই নামে ডাকতো পরে তিনি জানতে পারে। এই নামের উপাধিটা হৃদয়ই প্রথম দেয়। এরপর থেকে একেক করে সবার মুখে ছড়িয়ে পরে।
.
পান পার্টি শেষ হয়। অন্যদিকে তাদের খুনসুটি ভালবাসা তো চলছেই। এত কম বয়সে এত এত কেয়ারিং করা। যেটা অসম্ভব কিন্তু তারা দু'জন এটা সম্ভব করে ফেলেছে। অনেকদিন বাদে ভাবির বাসায় মানে তিন্নির বাসায় জানাজানি হয়ে যায় ব্যাপারটা।
.
পরে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তিন্নির পরিবার। কিন্তু কোনো বাঁধাই তাদের আলাদা করতে পারবেনা সেটা ছিলো তাদের প্রতি বিশ্বাস। আর একটি নিষ্পাপ ভালবাসাতে বিশ্বাস জিনিষ থাকাটা খুবই জরুরী। তাতে ভালবাসা মজবুত হয়।
.
লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করা, কথা বলা, আর বুকের মধ্যে থাকা ভালবাসাটা যেনো দিন দিন বাড়ছেই। এভাবে কেটে যাচ্ছিলো স্কুল জীবন।
.
- দোস্ত।
- হুম বল নাদিম।
- পিয়াস একটা প্লান করছে।
- কি প্লান করছে?
- প্লানটা হলো গত দু'বছর ধরে তো স্কুল থেকে কোথাও পিকনিকে যাচ্ছে না। তাই পিয়াস বলছে যে আমরা বন্ধুরা এবং ক্লাসমেটরা কোথাও ঘুরতে যাবো একসাথে।
- এটা তো ভালো প্লান। আচ্ছা এই নিয়ে প্রথমে পান মিয়াকে বলি। যদি উনি রাজি না হন তাহলে আমরা আমরা যাবো।
- হুমম তাই ভাল হবে।
.
পরে পান মিয়াকে বলে কিন্তু রাজি না হওয়ার কারণে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এবং যারা যারা যেতে ইচ্ছুক তারা তারা যাবে। সময় করে নেয়। তখন তারা অষ্টম শ্রেণীতে উঠে গেছে। ফ্রেবুয়ারির ২৫ তারিখেই তারা বনভোজনে যায়। হৃদয় এবং তিন্নি একসাথেই বসে আছে।
.
- তিন্নি
- হুমম বলেন।
- আমাদের রিলেশনশিপের ৩ বছর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো তুমি আমাকে আপনি করেই বলো। তুমি করে কি বলা যায়না?
- সময় হলে ঠিকই বলবো বুঝলেন।
- এই কথাটি আরো দু'বছর ধরেই শুনছি। কবে যে সেই সময়টা আসবে আল্লাহ্ ভাল জানেন।
- এইতো বুঝতে পেরেছেন। হাসি দিয়ে কথাটি বলে।
.
আপনি করে ডাকাটাই তিন্নির অনেক পছন্দের। কারণ জানতে চেয়েছে বহুবার কিন্তু তার একটাই উত্তর আপনি করে ডাকাটা সম্মান দেখায়। যার কারণে তিন্নি হৃদয়কে আপনি করেই সম্মতি দেয়। কিন্তু হৃদয়ের কাছে আপনি করে বলাটা ভাল লাগতো না। এই নিয়ে তাদের মাঝে প্রায়ই সময় খুনসুটি লেগেই থাকে।
.
- হৃদয় দোস্ত
- হ্যাঁ বল।
- সময় তো অনেক হলো। এইবার তাহলে যাওয়া যাক। কি বলিস?
- হুমম আসলেই। এখন রওনা দিলে বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে।
.
তাই আর দেড়ি না করে সাথে সাথেই রওনা দিয়ে দেয়। সবাই যার যার সিটে বসে আছে। হৃদয়ের কাঁধে মাথা রেখে তিন্নি বসে আছে এবং চেয়ে চেয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছিলো। খুব ভাল লাগছিলো তাদের।
.
- পিঁপাসা পাচ্ছে।
- পানি খাবে?
-হুমম।
.
ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে তিন্নির হাতে তুলে দিলো। বোতলে মুখ লাগিয়ে পানি পান করে। হৃদয়ও সেই বোতলের পানি খায়। বোতলে মুখে লেগে আছে তিন্নির ঠোঁটের লাল রংয়ের লিপ্সটিক। ঐ বোতলের মুখে মুখ ঠেকিয়ে হৃদয় পানি পান করে এবং তিন্নির ঠোঁটের লিপ্সটিকের ছোঁয়া পায়।
.
এই যুগের ভালবাসা মানে শারীরিক সম্পর্ক। তারা চাইলে সে ভুলটা করতে পারতো। কিন্তু তারা করেনি। তারা তাদের ভালবাসার সম্পর্কটা ফুলের মতো পবিত্র রেখেছে।
.
কি দরকার নিষ্পাপ ভালবাসাকে অপবিত্র করা। ভালবাসার মূল্য সবাই দিতে পারেনা। যারা পারে তারাই ভালবাসাকে পবিত্র রাখতে পারে। অমর হয়ে তাকে মৃত্যুর পরেও।
.
বাসায় পৌঁছাতে একটু রাত হয়ে যায় রাস্তায় জ্যামের কারণে। আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্র রহমতে ভাল মতোই সবাই বাসায় ফিরে। যে যার মতো বাসায় চলে গেলো। হৃদয় তিন্নিকে বাসা অবধি পৌঁছে দিয়ে সেও বাসায় চলে গেলো।
.
দিনটি ছিলো অনেক আনন্দের। তিন্নি পাশে না থাকলে দিনটি এতো সুন্দর হতো না। তার চোখের দিকে তাকালেই জান্নাত দেখতে পাওয়া যায়। তার চোখের ভাষা মনের ভাষা বলে দেয় কথাটি হৃদয় বলে মনে মনে। এর মধ্যেই পিয়াসের ফোন পেয়ে ভাবনা জগত থেকে ফিরে আসে হৃদয়।
.
- কিরে দোস্ত বাসায় পৌঁছেছিস?
- হ্যাঁ দোস্ত।
- আচ্ছা তাহলে আগামীকাল দেখা হবে। আল্লাহ্ বাঁচিয়ে রাখলে।
- হুম দোস্ত। ঘুমিয়ে পড় তাহলে।
- আচ্ছা দোস্ত শুভ রাত্রি।
.
তিন্নিকে খুব মনে পড়ছে তার। সারাটাদিন একসাথে ছিলো ছায়ার মতো। অনেক বেশি তিন্নির কথা মনে পড়ছিলো তার। হৃদয় তিন্নির কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে তা নিজেও বুঝতে পারলো না।
.
.
(চলবে)
Comments
Post a Comment