✴স্বপ্নময়ী✴ (৬ষ্ঠ পর্ব)



সবাই যার যার ব্যাগ গুছাচ্ছে। বিকেলেই রওনা দিবে কুয়াকাটা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। দুপুরের খাবার খেয়ে নেয় সবাই একসাথে। পিয়াসের বাবা দেশের বাহিরে থাকে যার কারণে তাদের সাথে যেতে পারছে না। আর অন্যদিকে স্নিগ্ধার বাবা অফিসের ব্যস্ততা নিয়েই দিন কাটিয়ে দেয়।
.
পিয়াস হচ্ছে তার মা-বাবার একমাত্র ছেলে। তার বাবার চেয়ে মাকে একটু ভয় পায়। বেশি না একটু ভয় পায়। আর তার বাবাকে তো ভয়ই পায়না। বন্ধুর মতো ফ্রি পিয়াস তার বাবার সাথে। সব কিছুই শেয়ার করে তার বাবার সাথে।
.
স্নিগ্ধা ও তার ছোট বোন এবং মা-বাবা নিয়েই তাদের সুন্দর একটি পরিবার। স্নিগ্ধা তার মায়ের সাথে খুব ফ্রি। কিন্তু তার বাবা আলফাজ সাহেবকে বাঘের মতো ভয় পায়। যার কারণে তার বাবাকে একটু কম ভালবাসে। কিন্তু তার মাকে সে অনেক ভালবাসে।
.
- পিয়াস।
- হ্যাঁ আম্মু।
- তোর বাবাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দে। নাহলে তো পরে হাজারটা কথা শুনাবে।
- বাবা কথা শুনাবে নাকি তুমি শুনাও।
- কি বললি?
- কই কিছু বলি নাই তো।
- শয়তান ছেলে একটা।
- ঠিকই তো আছে। বাবার নামে মিথ্যে অপবাদ দেও কেনো?
- আমিই মিথ্যে অপবাদ দেই?
.
পিয়াস এবং তার মায়ের খুনসুটি ঝগড়া চলতে ছিলো। পিছন থেকে স্নিগ্ধার আম্মু মানে পিয়াসের ফুপ্পি শুনতেছিলো আর হাসছিলো মা ছেলের ঝগড়া শুনে। পিয়াসের বাবাকে নিয়ে কিছু বলাই যেতো না। পিয়াস রেগে যেতো তার বাবাকে কিছু বললে।
.
- ভালই তো ঝগড়া করছিস।
- দেখোনা ফুপ্পি। আম্মু শুধু বাবাকে দোষারোপ করে সবসময়।
- হুমম দেখলামই এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোদের কান্ড। রেডি হয়েছিস তো?
- হুমম ফুপ্পি আমরা রেডি। এবার চলো বের হওয়া যাক।
- সবাই রেডি হলে কি হয়েছে। স্নিগ্ধা তো এখনো সাজুগুজু করছে। মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা।
- তোমরা থাকো আমি দু'মিনিটের মধ্যে নিয়ে আসতেছি তাকে।
.
বলেই স্নিগ্ধার রুমে প্রবেশ করলো। ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে সাজুগুজু করছে। তার পিছনে গিয়ে পিয়াস দাঁড়ায়। স্নিগ্ধা পিয়াসকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিলো। তা দেখে পিয়াস পাগল হয়ে যায় তার হাসির।
.
- কেমন লাগছে?
- তুমি তো আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী।
- ইসসসস রে। এভাবে বলে কেউ?
- হুমম কেউ বলে না। কিন্তু আমি বলি।
- তুমি তো পাগল তাই বলো।
- পাগল তো করেছো তুমিই।
- বললেই হলো।
- হুমম। আর কতক্ষণ লাগবে তোমার?
- এইতো শেষ হয়ে গেছে। আর দু'মিনিট।
- আচ্ছা তাড়াতাড়ি করো। আমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছি।
-ঠিক আছে।
.
স্নিগ্ধার সাজ পিয়াসের পছন্দ হলো না। কারণ পিয়াসের নরমালি পছন্দ। পিয়াস তো মনে মনে বলেই ফেলে পেত্নীর মতো লাগছে। কিন্তু কথাটি প্রকাশ করতে পারেনি। স্নিগ্ধা রাগ করতে পারে এর কারণে। পিয়াস সি.এন.জি নিয়ে আসতে যায়।
.
সি.এন.জি করে সদরঘাট পর্যন্ত যাবে। তারপর লঞ্চে করে কুয়াকাটা। পিয়াসের সবচেয়ে ভাললাগে লঞ্চ ভ্রমণ। ভাললাগে মাঝ রাতে লঞ্চের ছাদের উপর দাঁড়িয়ে ঠান্ডা হাওয়াটা। আসলেই অনেক ভাললাগে নদীর মাঝের ঐ ঠান্ডা বাতাসটা।
.
সি.এন.জি নিয়ে বাসার সামনে আসে। পিয়াস ড্রাইভারের পাশে বসছে। সবাই সি.এন.জিতে উঠে। পিয়াস লুকিং গ্লাস দিয়ে স্নিগ্ধাকে দেখেতো টাস্কিত। একেবারে নরমাল সাজে দেখতে পায় স্নিগ্ধাকে। চোখে কাজল,কপালের কালো টিপটিতে অনেক বেশি ভাল লাগছিলো।
.
পিয়াস বুঝতে পারলো না। পিয়াসের পছন্দের জিনিষ গুলোর সাথে সব কিছু কিভাবে মিলে যাচ্ছ। পিয়াস মনে মনে ভাবছে আর সি.এন.জিও চলছে। সারাটা পথ লুকিং গ্লাসে স্নিগ্ধাকে দেখতে দেখতেই শেষ হয়।
.
লঞ্চের টিকেট কেটে নেয় পিয়াস গিয়ে। কেবিনে গিয়ে বসে আছে যে যার মতো। পিয়াস বারান্দায় দাঁড়িয়ে নদীর ঢেউ দেখছিলো। পকেট থেকে মোবাইলটি বের করে দেখতে পায় নাদিমের কল। সাথে সাথে রিসিভ করে ফোনটা।
.
- হ্যালো দোস্ত কেমন আছিস?
- আলহামদুলিল্লাহ্‌ অনেক ভাল আছি দোস্ত।
- শালা একেবারে ভুলেই তো গেছোত স্বপ্নময়ীকে পেয়ে।
- তা নারে দোস্ত। তোকে কি করে ভুলবো বল। তুই তো আমার আত্না।
- হইছে হইছে। আর বলতে হবে না। ভাল মতো  পৌঁছিয়ে ফোন দিস।
- আচ্ছা দোস্ত।
- সে কোথায় পাশে নাকি?
- না। স্নিগ্ধা কেবিনে বসে আছে।
- আচ্ছা ভাল থাকিস পিয়াস দোস্ত।
-তুই ও ভাল থাকিস।
.
ফোন রেখে পিছনে ফিরতেই দেখে স্নিগ্ধা দাঁড়িয়ে আছে। পিয়াস তো হা করে তাকিয়েই ছিলো।
.
- এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
- দেখছি।
-কি দেখছো?
- তোমার চোখবসে আমাকে।
- তাই??
- হুমম তাই। তোমাকে অনেক সুন্দরী লাগছে।
- সত্যি?
- হুমম তিন সত্যি।
- যাক বাবা। শুনে ভাল লাগছে।
.
পরে জানতে পারে পিয়াসের জন্যই স্নিগ্ধা সেঁজেছিলো। এভাবেই চলছিলো তাদের ভালবাসা। পিয়াসের কাঁধের উপর মাথা রেখে বসে বসে নদীর ঢেউ দেখছে স্নিগ্ধা। আর পিয়াস তার স্বপ্নময়ীর চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছিলো। যেভাবে ভ্রমর ফুল থেকে মধু নেয়। ঠিক ঐ ভাবেই চুল থেকে ঘ্রাণ অনুভব করছিলো। মাঝে মাঝে তো দুষ্টামির ছলে তার চুল হালকা ভাবে টানছিলো। আর স্নিগ্ধা পিয়াসের বুকে আস্তে করে কিল দিচ্ছিলো।
.
.
(চলবে)

Comments