নীরবতা (২য় পর্ব)


- ভেতরে এসে বসো নাদিম ।
- সুবর্ণা রেডি হয়নি এখনো?
- তুমি তো জানোই ওর রেডি হতে অনেক সময় লাগে। তুমি ভেতরে এসে বসো।
- আচ্ছা আন্টি ঠিক আছে।
.
ভেতরে গিয়ে বসলাম। কেমন জানি মনে হইতাছে নিজের থেকে। মানুষ কি না কি ভাববে যখন সুবর্ণার নানু বাড়িতে গিয়ে পৌঁছবো। আবার এই প্রথম কোন মেয়ের সাথে তার আত্বীয়ের বাসায় যাচ্ছি। তার আত্বীয়রাই কি না ভাববে। এই নিয়েই ভাবতে ভাবতে আধা ঘন্টা হয়ে গেলো। আধা ঘন্টা পর সুবর্ণা আসলো রেডি হয়ে।
.
- কিরে কখন আসলি?
- তুই কয়টা বাজে আসতে বলছোত?
- কয়টায় জানি বলছিলাম??
- ফাইজলামি বাদ দিয়া তাড়া-তাড়ি রেডি হো। ভাল লাগতেছে না বলে দিলাম।
- আচ্ছা। আর ২০ মিনিট অপেক্ষা কর। আমি আসতেছি।
.
বলেই অন্যরুমে  চলে যায়। আরো বিশ মিনিট??  মেয়েদের এত সময় লাগে কেনো বুঝিনা। কি আর করার বসে বসে ফেসবুকে নিউস ফিড দেখছিলাম। ২০ মিনিট শেষ হয়ে ৪০ মিনিট হয়ে গেলো। কিন্তু তার কোনো খবর নাই। হায়রে কপাল কই যামু। আর একটা কথা বুঝতে পারছিনা। ও এমনি অনেক সুন্দর যা পরে তাতেই অনেক কিউট লাগে। তবুও এত সাঁজুগুজু করার কি দরকার।
.
অবশেষে সে রেডি হয়ে আসলো। তাকে দেখে মেজাজটা আরো বেশি গরম হয়ে গেলো। কি ভুতের মতো সেঁজেছে। এমনটা মনে হওয়াই স্বাভাবিক কারণ তখন রেগে ছিলাম। ভাল হলেও খারাপ বলতাম। যাক তাহলে এইবার রওনা দেওয়ার পালা। আন্টির কাছ থেকে সব কিছু বুঝে নিলাম কিভাবে কিভাবে যেতে হবে।
.
সাড়ে ৬ টায় গাড়ি ছাড়বে। ২০ মিনিট আগে বাসা থেকে বের হলাম। বাস স্ট্যান্ড এ যেতে ১০ মিনিট লাগবে। রিক্সায় উঠলাম আমার পাশে পেত্মীটা বসে আছে। এমনিতে রেগে আছি তাই কোনো কথা বলছিনা। মুখটা পেচার মতো করে রেখেছি। আর অন্যদিকে এলাকার কিছু পোলাপাইন হা করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। কেমনটা লাগে মনটা চাইছিলো।
.
আর যে ছেলেরাই সুবর্ণাকে প্রোপোজ করতো। ও বলতো ওর বয় ফ্রেন্ড আছে। বয় ফ্রেন্ড আছে ভাল কথা,, সবার কাছে বলতো আমি তার বয়ফ্রেন্ড। এই নিয়া অনেক ঝগড়া হইছে তার সাথে। কি আর করার বান্ধবী বলে কথা। আর সুবর্ণার ফ্রেন্ডরাও জানে আমি তার বয় ফ্রেন্ড। কিন্তু এদিকে কিছুই নয়।
.
রাতে ভ্রমন করাটা অনেক ভাল লাগে কেনো জানি। আমার নিজের ব্যাগ আর সাথে তার ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে হেটে বাসের সামনে গেলাম। মনে হচ্ছিলো তার বডিগার্ড আমি। গিয়ে বাসে উঠলাম। আমি আগে আগে জানালার পাশের সিটে গিয়ে বসলাম। কারণ আমি জানালার পাশ ছাড়া বসতে পারিনা।সুবর্ণাও বসতে পারে না কিন্তু আজ বসতে হবেই তার।
.
- দোস্ত?
- কি।
- আমাকে জানালার পাশে বসতে দে না প্লীজ।
- না পারুম না।
- প্লীজ দোস্ত।
- আমি কিন্তু এখন নেমে যাবো বলে দিলাম।
- হুহহহহ।
.
মুখটা গুড়িয়ে বসে আছে চুপ-চাপ করে। আমি কখনো তাকে সরাসরি চুপ-চাপ বসে থাকতে দেখিনি। খুব বেশি রাগ করছে বুঝতে পারলাম। এইদিকে বাস ছেড়ে দেয়। সুবর্ণার একটা বদ অভ্যাস ছিলো যেটা সে জানালার পাশে না বসলে বমি করতো। কিন্তু সেটা আমার মনে ছিলো না তখন। আমি কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে ছিলাম। কিছুক্ষন পরই আমার উপর বমি করে দেয়।
.
ধ্যাত কেমনটা লাগে। পরে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিলাম।খুব খারাপ লাগছিলো তার জন্য আবার রাগও হচ্ছিলো অনেক। পরে জানালার পাশে দিলাম তাকে। তাকে ঘুমিয়ে থাকার জন্য বললাম। সে একটু ঘুমিয়ে পরে। কিছুক্ষণ পর পাম্পের সামনে গিয়ে থামলো গাড়ি। আমি নেমে কিছু নিয়ে আসলাম দোকান থেকে। এবং ভাল করে হাতে - মুখে পানি দিয়ে ধুয়ে আসলাম। যে অবস্থা হইছিলো তখন।
.
পরে উঠে পরলাম বাসে। কিছুক্ষনের মধ্যে বাস ছেড়ে দিলো। আমি আমার টি সার্ট টা চেঞ্জ করে ফেলি। কারণ টি সার্টের উপরই বমি করেছিলো। পরে সুবর্ণাকে ডেকে উঠিয়ে দেই।
.
- এই উঠ কিছু খেয়ে নে।
- না কিছু খাবো না ।
- আরে যা খাইছোত সব তো আমার উপরেই ফেলছোত। এখন কিছু খেয়ে নে ।
- ঠিকই তো আছে তোকে তো বলেই ছিলাম। কিন্ত তুই তো শুনিসনি।
- হইছে এখন খেয়ে নাও।
- কিহ?
- খেয়ে নে ।
- আচ্ছা। তুই অনেক ভাল রে।
- হইছে পাম মারতে হবে না।
- যাহ। সত্যি বললেও বলে পাম মারি।
- আচ্ছা চুপ কইরা এখন খেয়ে নে।
.
ভুল করে তুমি বলে ফেলছিলাম। তুমি করে ডাকটা কত মধুর মতো লাগে। সুবর্ণা আমার মুখে হঠাৎ তুমি ডাক শুনে হেসে দেয়। পরে আমার সাথে সেলফি তুলে ফেসবুকে আপ দেয় আমাকে ট্যাগ করে। কিছুক্ষণ পরে ওর একটা ফ্রেন্ড কমেন্টস করে। যেটা দেখে সুবর্ণাকে বকাবকি করলাম। কমেন্টস টা ছিলো "নাইস কাঁপল " এরকম কিছু একটা।
.
অবশেষে সুবর্ণার নানু বাসায় গিয়ে পৌঁছলাম। যেতে যেতে ১১:৩০ টা বেজে গেলো। সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় আমাকে। সুবর্ণার কয়েকটা কাজিন জানে আমি ওর বয় ফ্রেন্ড। ঐ দিন রাতে সবাই একসাথে ডিনার করি।
.
.
🔹চলবে🔸

Comments