✴স্বপ্নময়ী✴ (৮ম পর্ব)


- আচ্ছা স্নিগ্ধা তোমার ঐদিনের কথাটি মনে আছে?
- কোনদিনের কথা?
- যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম। এবং দেখেই চেয়ারে বসতে গিয়ে নিচে পড়ে গেছিলাম।
- হুমম মনে আছে। তুমি আমার দিকে যেভাবে তাকিয়ে ছিলে। তখনই কিছু একটা ভেবে নিয়েছিলাম।
- কি ভেবে নিয়েছিলে? বলোনা প্লিজ।
- আরে বুঝোনা। তুমি যে আমাকে পছন্দ করো এটা ভেবে নিয়েছিলাম।
- ওহহহহহ। কিন্তু বুঝতে এতো দেড়ি করলে কেনো?
- বাহ রে। ভাল মতো জানতে হবেনা।
- হুমম বুঝলাম।
.
পিয়াস তখন দশম শ্রেণীতে পড়তো। পিয়াস তার মায়ের সাথে বেড়াতে যায় তার ফুপ্পির বাড়ি। তখন পিয়াস কারো সাথেই বেশি কথা বলতো না। একদম চুপ-চাপ থাকতো। তার ফুপ্পির বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। পৌঁছাইতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সবার সাথে কথা বার্তা বলে বিশ্রাম নেয়।
.
পিয়াস তার ফুপ্পির বাড়িতে সেইদিনই প্রথম গিয়েছিলো। তার ঘুরা-ঘুরি পছন্দ ছিলো না। অনেক বলা বলিতে যায়। রাতে একসাথে খাবার খাবে। সবাই ড্রাইনিং টেবিলে বসে আছে। পিয়াস ঘুমিয়ে পরেছিলো যার কারণে সবার শেষে আসে। তখন স্নিগ্ধা চেয়ারে বসা ছিলো। স্নিগ্ধা কোচিং থেকে আসতে আসতে পিয়াস ঘুমিয়ে যায়। যার কারণে পিয়াসের সাথে স্নিগ্ধার দেখা হয়নি।
.
পিয়াস টেবিলের কাছে আসতেই স্নিগ্ধাকে দেখে। প্রথম দেখাতেই চোখ সরাতে পারছিলো না। প্রথম দেখেই ভালো লেগে যায় তার। স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে থেকে বসতে গিয়েই নিচে পড়ে যায়। যেটা নিয়ে হাস্যকর হয়ে যায়। ঐ দিনই ঠিক করে পিয়াস এবং স্নিগ্ধার বিয়ের কথা।
.
রাত শেষ হয়ে ভোর হতে লাগলো। সারা রাত লঞ্চের বারান্দাতেই কাটিয়ে দিলো দু'জন। কথা বলতে বলতেই পিয়াসের কাঁধের উপর মাথা রেখে স্নিগ্ধা ঘুমিয়ে যায়। পিয়াস জেগে ছিলো। তার পর সকালে গিয়ে পৌঁছে কুয়াকাটায়। প্রথমে হোটেল গিয়ে উঠে। পিয়াসে ঘুমিয়ে পড়ে। সারা রাত জেগে ছিলো তাই ঘুমিয়ে পড়ে।
.
ঘুম ভাঙে তার মায়ের ডাকে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নেয়। সকালে প্রচন্ড রৌদের কারণে বের হয়নি হোটেল থেকে। বিকেলে বের হয় সবাই। সব সময় স্নিগ্ধা পাশেই ছিলো পিয়াসের। যার কারণে কাউকে মিস করতে হয়নি কখনো।
.
৩ দিন ২ রাত থাকে কুয়াকাটা। পিয়াসের সে স্বপ্নের মতো মিলে যায়। এটা আসলেই কিভাবে সম্ভব হলো সেটা পিয়াস আজও বুঝতে পারেনি। কিছু কিছু অসম্ভব কাজ গুলো কিভাবে যে সম্ভব হয়ে যায়। তা আসলে কেউই বুঝতে পারেনা।
.
বিকেল ৫ টা বাজে তখন। স্নিগ্ধা এবং পিয়াস দু'জন হাটছিলো। কিছু বখাটে ছেলেরা তাদেরকে নিয়ে নোংরা ভাবে কিছু কথা বলে। যা পিয়াস একদমই সয্য করেনি। চেহারা গুলো চিনে রাখে। পরে হোটেলে চলে যায়।
.
কিছুক্ষণের মধ্যেই অচেনা নম্বর থেকে একটি ফোন আসে। রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে একটা চেনা কন্ঠ শুনতে পায়। কিন্তু মনে করতে পারছেনা কে ফোন করেছে।
.
- হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আসলাম। পিয়াস কেমন আছিস?
- জ্বি ভাল। কে বলছেন?
- শালার পো আমাকে চিনস না।
- ওহহহ হৃদয়।  কেমন আছিস দোস্ত।
.
হৃদয় ছিলো পিয়াসের ক্লাস মেট। তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল।  আগে ঢাকাতেই একসাথে পড়ালেখা করে। পরে ব্যবসার কাজে গ্রামে এসে পরতে হয়।
.
- হুমম ভালই আছিরে দোস্ত। নাদিমের কাছ থেকে শুনতে পেলাম তোরা নাকি কুয়াকাটায় গেছিস?
- হ্যাঁ। দোস্ত।
- আমিও তো ৫ দিন ধরে কুয়াকাটাই আছি। তোরা কোন হোটেলে উঠেছিস?
.
পরে সবকিছু খুলে বলে পিয়াস। পরে জানতে পারে হৃদয় ও একই হোটেলেই আছে। পরে দেখা করে। হৃদয় তার বন্ধুদের সাথে কুয়াকাটা আসে ৫ দিন ধরে। ঐ দিনই চলে যেতো কিন্তু পিয়াসদের জন্য আরো দুই দিন থাকে।
.
পরে পিয়াস হৃদয়ের কাছে ঐ বখাটে ছেলেগুলোর কথা বলে। এমনিতেই হৃদয় রেগে যায় ছেলেদের প্রতি। সবার সাথে দেখা করে বন্ধুদের নিয়ে বের হোটেল থেকে। ভাগ্য খারাপ ছিলো ঐ ছেলেদের তাই হোটেল থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই দেখা হয়ে যায় ওদের সাথে।
.
দেখা মাত্রই মারা-মারি শুরু হয়ে যায়। লোকজন ভির হয়ে যায়। যাদের মেরেছে ওরা ঐ খানকার ছেলেই ছিলো। পরে অনেক সমস্যা হয়ে যায়। যার ফলে বেশিদিন কুয়াকাটা থাকতে পারেনি। দুইদিন পরই কুয়াকাটা থেকে চলে আসে। ঢাকায় ফিরলো না। সোজা হৃদয়দের বাড়িতে চলে গেলো সবাই। তাদের বাড়িতে ১ সপ্তাহ থাকে।
.
- হৃদয় দোস্ত চল গ্রামটা একটু ঘুরে দেখে আসি।
- হুমম অবশ্যই চল।
.
পিয়াস,  হৃদয়, স্নিগ্ধা এবং তার ছোট বোন বের হলো গ্রাম ঘুরে দেখতে। পরে হৃদয়ের সাথে স্নিগ্ধাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। পিয়াস এবং স্নিগ্ধা আলাদা করে স্নিগ্ধার ছোট বোন রুমিকে নিয়ে হৃদয় সামনে চলে গেলো। রুমিকে চকলেট কিনে দেয়।  রুমি চকলেট পেলে আর কিছু বুঝেনা।
.
ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসে। স্নিগ্ধা এবং রুমিকে বাড়িতে রেখে যায়। পরে আবার তারা বের হয়। রাতে আড্ডা মারতে মারতে দেড়ি হয়ে যায়। রাত তখন ১০ টা বেজে যায়। আড্ডার সাথে এক প্যাঁকেট ব্যান্সন সিগারেট শেষ করে ফেলে।
.
- রাত তো অনেক হলো। চল এবার উঠা যাক।
- মাত্র দশটা বাজে। আর কিছুক্ষণ থাকা যাক।
- হাহা এটা গ্রাম। রিক্সা পাওয়া যাবেনা। পরে হেটেই যেতে হবে পিয়াস।
- ওহহহহহ তাহলে চল।
.
রাস্তা দিয়ে হাটছে কিন্তু একটা রিক্সাও পাচ্ছে না। কি আর করার?
কপাল খারাপ থাকলে যা হয়। ১ মাইল রাস্তা হেটে হেটেই বাসায় ফিরতে হলো। বাসায় ফিরতে ফিরতে সাড়ে এগারটা বেজে যায়। বাসায় ফিরে দেখে স্নিগ্ধা ঘুমিয়ে আছে। রাতের খাবার খেয়ে পিয়াস এবং হৃদয় ছাদে গিয়ে বসে।
.
সিগারেট টানছে আর কথা বলছে। চারদিক অন্ধকার হয়ে আছে।
.
- তো কেমন চলছে তোর দিনকাল?
- এইতো ভালই চলছে। কিন্তু তোর মতোকিছ এত ভালো নারে দোস্ত।
- কেনো দোস্ত। কি হয়েছে খুলে বল আমাকে।
- সিগারেট ধরায় হৃদয়। টানছে আর বলছে। বলতে বলতে ফিরে যায় ৭ বছর আগের কথায়।
.
তখন তারা ক্লাস ফাইভে পড়ে। হৃদয়, পিয়াস এবং নাদিম তিন জন ছিলো আত্নার বন্ধু। এক জন আরেক জন ছাড়া কিছুই বুঝতো না। তিন জনের একই রকমের টি শার্ট, জুতো পড়তো। স্কুলের টিচাররা তাদের তিনজনকে আপন ভাই মনে করতো। শুধু টিচাররা না আরো অনেকেই তাদের ভাই মনে করতো। তারা এক মায়ের সন্তান না তবেও যেনো কোনো কিছুর কম নয়।
.
ফাইভে পরিক্ষা শেষ করে ক্লাস ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উঠে। প্রথমদিন ক্লালে ঢুকেই হৃদয় একটি মেয়েকে দেখে ক্রাশ খায়। মেয়েটি দেখতে মাশাআল্লাহ্‌ অনেক সুন্দরী ছিলো। হৃদয় মেয়েদের থেকে দূরে দূরে থাকতো। কিন্তু সেই হৃদয়ই কোনো মেয়েকে দেখে আর চোখ ফেরাতে পারেনি।
.
কথাটা পিয়াস এবং নাদিমকে জানায়। তারা হৃদয়ের মুখে এই কথা শুনে তো অবাক হয়ে যায়। এখন একটাই কথা কিভাবে সেই মেয়েটিকে প্রপোজাল দিবে। পিয়াস একটু চুপ-চাপ টাইপের ছিলো। কিন্তু প্রেম ভালবাসা সম্পর্কে ভাল ধারণা ছিলো। তার চেয়ে বেশি ধারণা ছিলো নাদিমের। নাদিম বই পোকা ছিলো। নাদিমকে যদি একটা গল্পের বই দেয়া যেতো তাহলে আর কিছু লাগতো না। নাদিম ভালবাসার গল্প পড়েই ভালবাসা সম্পর্কে এত ধারণা। স্কুল লাইফে নাদিম লাভগুরু নামে পরিচিত হয়।
.
কিছুদিন ঘুরা-ঘুরির ফলে চার মাসের সময় তিন্নিকে সরাসরি ভালবাসার কথা জানায়। ওহ হ্যাঁ সেই মেয়েটির নাম ছিলো তিন্নি। প্রথমে সে রাজি হয়নি। কিন্তু একটা সময় তিন্নি সম্মতি দেয়। তারপর থেকেই শুরু হলো হৃদয় এবং তিন্নির স্কুল জীবনের ভালবাসা।
.
.
(চলবে)

Comments