হৃদয় লঞ্চ টার্মিনাল পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। হৃদয়কে অনেকবার বলা হয়েছে পিয়াসদের সাথে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রাজি হয়নি যেতে। কারণ পিয়াসদের ঐখানে গেলে তিন্নি কে দেখতে পারবে এর কারণে। কিন্তু হৃদয় তো জানেই না তিন্নি আর বেঁচে নেই। বহুদূরে চলে গেছে আরো দু'বছর আগেই। হৃদয় জানতে পারলে সে নিজেও তার কাছে চলে যেতো।
.
ঢাকায় ফিরার জন্য লঞ্চে উঠে। পিয়াস, স্নিগ্ধা, রুমি এবং তাদের মা। একসাথেই যাচ্ছেন সবাই। এইদিকে পিয়াস এবং স্নিগ্ধা আরো বেশি ক্লোজ হয়ে যায়। এখন পিয়াসের ফুপ্পি এবং মায়ের সামনেই স্নিগ্ধার সাথে হাত ধরে কথা বলতে পারে। কারণটা তো জানেনই না। তাহলে শোনেন ঘটনাটি।
.
হৃদয়দের বাড়িতে থাকা অবস্থায় পিয়াসের মা দেখে ফেলে তখন তারা ছাদের এক পাশে বসেছিলো। পিয়াসের কাঁধে স্নিগ্ধা মাথা রেখে কথা বলছিলো। ঠিক তখনই পিয়াসের মামা তাঁদেরকে দেখে ফেলে এবং স্নিগ্ধার মাকে ডেকে এনে দেখায়। তাদের কাহিনী দেখে তারা দু'জনই খুশি হলেন। এবং ঐ দিনই বলে যে পিয়াস এবং স্নিগ্ধার বিয়ের কথা। কিন্তু তারা তো এখন ছোট। আরো বড় হতে হবে। তাই কথা ঠিক হলো ঢাকায় গিয়েই তাদের এংগেজ করে রাখবে।
.
এই কথাটি তখনো পিয়াস এবং স্নিগ্ধা শুনেনি। পরে স্নিগ্ধার ছোট বোন রুমি এসে বলে কথাটি। রুমির কথা শুনে দু'জনই খুব খুব খুশি হয়েছিলো। বিধাতা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। এরপর থেকেই তারা একটু বেশি ক্লোজ হয়ে যায়। এবং তাদের ভালবাসাটাও যেনো দিন দিন বাড়তে থাকে।
.
- এই যে আমার হবু বউমা তাড়াতাড়ি বড় হউ। আমার সংসারের দায়িত্ব তো তোমাকেই নিতে হবে।
.
কথাটি শুনে স্নিগ্ধা লজ্জায় তার মুখটি লাল হয়ে যায়। এবং সাথে সাথে মাথাটি নিচু করে। কথা গুলো পিয়াসের মুখ থেকে শুনতে পাবে এটা কখনো ভাবেনি সে।
.
- আরে বাবা। আমার আম্মুটি দেখি আবার লজ্জাও পাচ্ছে। এত লজ্জা পেতে হবেনা। আজ তুমি আমার মেয়ের মতোই।
- জ্বি মামী।
- উঁহুম মামী নয়। আজ থেকে আম্মু বলে ডাকবে কেমন!
- হুমম ঠিক আছে।
.
পরে পিয়াসের আম্মু কেবিনে চলে গেলো। আর স্নিগ্ধা বারান্দায় দাঁড়িয়ে পিয়াসের মায়ের বলা কথা গুলো ভেবে ভেবে মুচকি হাসছিলো। লজ্জা পেলেও খুব খুশি হয়েছিলো কথা গুলো শুনতে পেয়ে। একটু পরেই স্নিগ্ধার ছোট বোন এলো।
.
- আপু চকলেট খাবো।
- এখন তো চকলেট নেই।
- কেনো নেই?
- নিতে ভুলে গেছিলাম। আচ্ছা তোমার পিয়াস ভাইয়া কোথায়?
- পিয়াস ভাইয়া তো কেবিনে ঘুমিয়ে আছে।
- ওহহহহহ। ঘুম থেকে উঠলে ভাইয়াকে বলো এনে দিবে।
- আচ্ছা আপু। আর তুমি পিয়াস ভাইয়াকে ভাইয়া বললে কেনো? তুমি তো স্বামী বলবে।
.
কথাটি বলেই রুমি সেইখান থেকে দৌঁড়ে কেবিনে এসে পরে। এবং স্নিগ্ধা তার ছোট বোনের মুখে এই কথা শুনে পুরোই অবাক হয়ে গেলো। এবং আস্তে আস্তে বলতে লাগলো।
.
- পিচ্ছি মেয়ে সব কিছুই বুঝে।
.
কথাটি বলে স্নিগ্ধাও হেসে দেয়। সামনে দাঁড়িয়ে নদীর ঢেউ দেখছে আর পিয়াসকে মিস করছে। আর অন্যদিকে তো পিয়াস ঘুমোচ্ছে। গতকাল সারা রাত ঘুমোতে পারেনি। কারণ সারা রাতই ছাদে জেগে জেগে স্নিগ্ধাকে নিয়ে চাঁদ দেখেছে এবং মৃদুবাতাসটা অনুভব করেছে। স্নিগ্ধা সকালে ঘুমিয়েছিল কিন্তু পিয়াস আর ঘুমোতে পারেনি। তাই তখন ঘুমোচ্ছিলো।
.
স্নিগ্ধা একা একা দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছিলো। পিয়াসের কথাও খুব মনে পড়ছিলো। কেনো যে এখন ঘুমোচ্ছে ফিস ফিস করে কথাটি বলছিলো সে। হঠাৎ কে যেনো পাশে এসে দাঁড়ায়। স্নিগ্ধা তাকিয়েই দেখতে পেলো পিয়াসকে। দেখে খুশিতে আত্নহারা হয়ে যায় মনের মধ্যে।
.
- কি গো। এভাবে একা একা দাঁড়িয়ে আছো এখানে।
- তাহলে কি করবো? < অভিমানী কন্ঠে কথাটি বলে>
- আমাকে তো ডাকতে পারতে। তাই না?
- হুমম। কিন্তু তুমি তো ঘুমাচ্ছিলে। তাই আর ডাকিনি। তা ছাড়া গতকাল তো ঘুমাতেও পারোনি।
- তো কি হয়েছে। আমার জান পাখিটা একা একা দাঁড়িয়ে আছে। এটা কি ভাল দেখায়।
- ইসস রে।
- কি হয়েছে?
- কিছু হয়নি তো।
- ওহহহহহ।
- জানো আজ না আমি অনেক খুশি।
- ওহহহ তাই? তো আমার জান পাখিটা এত খুশি হওয়ার কারণটা কি জানা যাবে?
- উঁহুম যাবে না।
- না শুনতে পারলে তো কষ্ট পাবো। তুমি কি চাও আমি কষ্ট পাই।
- একটু আধটু কষ্ট পেলে কিছু হয়না।
- এটা বলতে পারলে? যাও তোমার সাথে কথা নেই।
.
কথাটি বলে পিছনের দিকে ঘুরবে এমন সময়ই স্নিগ্ধা তার হাতটি ধরে ফেলে। এবং শরীরে সাথে ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে দু'জন। পিয়াস কথা বলছে না। মুখটি কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। স্নিগ্ধা হাসানোর চেষ্টা করছে কিন্তু চেষ্টা বিফলে। এইবার বুঝি একটু বেশি অভিমান করে ফেলেছে। তাই অভিমান ভাঙানোর জন্য পিয়াসের গালে একটি ছোট্ট ভালবাসার আদর একে দেয়।
.
এইবার স্নিগ্ধাই লজ্জায় পড়ে যায়। পিয়াস যখন তার গালে স্নিগ্ধার কোমল ঠোঁটের স্পর্শ পেলো। সাথে সাথেই একটা শক খেলো। ভাবতে পারেনি যে এত তাড়াতাড়ি আদরটা পেয়ে যাবে।
.
- কি হলো কথা বলবেনা?
- না <মাথা নেড়ে>
- আচ্ছা বলতে হবেনা কথা।
- হুমম আজ কোনো কথা হবেনা। শুধু হাতটি ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো।
- আচ্ছা।
.
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর স্নিগ্ধা পিয়াসকে বলে।
.
- এই জানো। রুমি কি বলেছে?
- কি বলেছে?
- ও আমার কাছ থেকে চকলেট নিতে এসেছিলো। পরে আমি ভুল করে তোমাকে ভাইয়া বলে ফেলছিলাম।
হুমম তারপর।
- তারপর ও বলে যে আমি তোমাকে ভাইয়া বলি কেনো। তুমি নাকি আমার স্বামী হও।
.
তারপর দু'জনই হেসে দিলো।
.
- আচ্ছা দাঁড়াও চকলেট নিয়ে আসছি রুমির জন্য।
- অকে যাও।
- শুধুই কি শালির জন্যই আনবো? বউয়ের জন্য আনবো না?
- কিহহহ।
- না কিছুনা।
- পাগল একটা।
.
হুমম তোমার পাগল। বলেই চলে গেলো পিয়াস চকলেট আনতে। আর স্নিগ্ধা দাঁড়িয়েই রয়েছে সেইখানে।
.
.
(চলবে)
Comments
Post a Comment