নীরবতা (চতুর্থ পর্ব)


গায়ে হলুদে খুব বেশি মজা হয়েছিলো। শেষ পর্যায় আমাকে হলুদ দিয়ে পুরো মুখ মেখে ফেলে। মনে হচ্ছিলো বিয়েটা আমারই হচ্ছে। আমাকে হলুদ মাখিয়ে সুবর্ণা অনেক বেশি খুশি হয়েছিলো। তার হাসি মাখা মুখটা দেখতে আমার খুব ভাললাগে। খুব ভাল লাগে যখন সে হাসি-খুশি থাকে।
.
আমি আগেই বলেছিলাম যে সুবর্ণাকে শাড়িতে অনেক সুন্দরী লাগে। আসলে মেয়েদের সৌন্দর্য শাড়িতেই বোঝা যায়। কিন্তু কেনো জানি সুবর্ণাকে অনেক বেশি ভাল লাগছিলো হলুদ শাড়িতে। হলুদ রং টা তেমন পছন্দ করতাম না। কিন্তু ঐ দিনের পর থেকে হলুদ রং টাও ভাল লাগতে শুরু করে। কারণ সুবর্ণাকে হলুদ শাড়িতে হলুদ পরীর মতো লাগছিলো।
.
যদিও কখনো পরী দেখিনি। জানিও না যে পরী দেখতে কেমন হয় কিন্তু ঐ দিন সুবর্ণাকে দেখেই মনে হয়েছিলো যে সুবর্ণার মতোই দেখতে পরী রা। কখনো প্রেমে পড়িনি তাই বুঝিনি কেমন লাগে। তবে সেইদিনই বুঝতে পেরেছিলাম প্রেমে পড়লে শুধু প্রিয়জনকে কাছে পেতে মনে চায়। মনে চায় তার সাথে সারাক্ষণ কথা বলতে।
.
সেইদিন রাতে আড়ালে কার সাথে জানি ফোনে কথা বলতেছিলো। আমিও আসতে আসতে তার পিছনে একটা জায়গায় দাঁড়াই। যাতে সে না দেখতে পায় আমাকে। এবং শুনতেছিলাম কি বলতেছে এবং কার সাথে কথা বলতেছে। এইদিকে ব্যাপক টেনশনে পড়ে গেলাম।
.
হুমম আন্টি তোমার ছেলে তো আমার প্রেমে পড়ে গেছে। এখন আর আমার সাথে ঝগড়া করেনা। সারাক্ষণ শুধু আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখে। এখন কি করবো বলো?? তোমার কথা মতোই তো শুনেছি। এখন বলো কি কি করতে হবে আর। আর তুমি তো জানোই আমি কতোটা পছন্দ করি তোমার ছেলেকে। এখন যা করার তাড়ি-তাড়ি করো।
.
আমি আড়াল থেকে সুবর্ণার সব কথা শুনি। এবং বুঝতে আর কিছু বাকি রইলো না যে আম্মুর সাথেই কথা বলেছিলো সুবর্ণা। আচ্ছা তার মানে আম্মু পছন্দ করে সুবর্ণাকে। আর আমিও জানি সুবর্ণাকে পছন্দ করি এর জন্য এত কিছু। এখন বুঝতে পারলাম সুবর্ণার নানু বাড়িতে আসার কারণটা। তাহলে তো আমাকে একটু শক্ত হতে হবে। তাই ভাবলাম যে সুবর্ণার সামনে একটু কম যাবো। কিন্তু আড়ালে থেকে তাকে দেখবো।
.
রাত শেষে ভোর হলো। এর পরেরদিন সুবর্ণার মামার বিয়ে। আর বিকেলেই রওয়ানা দিবো ঢাকায়। কিন্তু আন্টির কথা শুনে মনে হলো না আগামীকাল ঢাকায় যেতে পারবো। আন্টি বলেছিলো আরো দুইদিন পর যাবে। এমনিতে আমারও অনেক ভাল লেগে যায় সেখানে। সবার সাথে অল্প কয়েকদিনে অনেক ফ্রি হয়ে গেলাম। বিশেষ করে সুবর্ণার কাজিনদের সাথে অনেক বেশি ফ্রি হয়ে গেলাম।
.
প্রায় ২৪ ঘন্টা সুবর্ণার সাথে কথা বলিনি। ব্যস্ততার মাঝে লুকিয়ে রেখেছিলাম নিজেকে। কিন্তু তার কাজিনদের কাছ থেকে জানতে পারি। সে নাকি সারাক্ষণই আমার কথা বলে তাদের কাছে। আমিও জানি সে আমাকে অনেক ভালবাসে। কিন্তু তার মুখ থেকে কখনো শুনিনি ভালবাসার কথা। তাই এইবার শুনতে ইচ্ছে হইলো। তাই তো তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকি।
.
১দিন পর মানে আজ তার মামার বিয়ে। কিভাবে যেনো তার সামনা-সামনি পরে গেলাম। দেখা মাত্রই আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুখ ভেংচি দিলো। আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো একটা জায়গায়। আমার হাতটি এরকম ভাবে ধরেছিলো যে মনে হচ্ছিলো হাতের মধ্যে কি যেনো একটা ভারি জিনিষ দিয়ে আটকে রেখেছে কেউ।
.
- ঐ সারাক্ষণ কোথায় ছিলি গতকাল??
- চুপ-চাপ দাঁড়িয়ে আছি।
- কিরে কথা বলছিস না কেনো?? বল গতকাল কোথায় ছিলি?
- কোথায় আবার তোর আশে পাশেই ছিলাম।
- আশে পাশে থাকলে তো আমি দেখতামই।
- সত্যি কথা বলবো??
- হ্যা সত্যি বল।
- একটা মেয়েকে খুব পছন্দ হয়েছে। গতকাল তার পিছনেই সময় দিয়েছিলাম।<মজা করে বলি>
- কিহহহহহ?? <রেগে গেছে> 
- হুমমম রে কি সুন্দর মেয়েটা। অনেক ভাল লেগে গেছে।আমাকে একটু সাহায্য করবি।
- কোন মেয়ে?
.
চোখের মধ্যে পানি টলমল করছে। মনে হচ্ছে এখনি অঝর ঝড়ে বৃষ্টি নামবে। যা বাবা সে দেখি সত্যি সত্যি কান্না করে দিলো। সত্যি বলতে তাকে কান্না করতে দেখে আমারও মন খারাপ হয়ে গেলো।
.
- এই তুই কান্না করছিস কেনো?
- 😥😨😧😩😰
-আরে বাবা এত কান্না করলে মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে তো।
- তুই বল কোন মেয়ের পিছনে ঘুরেছিস <কান্না করতে করতে বলে>
- কেনো বললে কি হবে?
- আমার কি হবে তাহলে?
- মানে।
- তুই বুঝিসনা আমি তোকে কত ভালবাসি।
- কিভাবে বুঝবো? কখনো কি বলেছিস?
- সব কিছু বলতে হয় নাকি?
- না বললে কি করে বুঝবো।
- এখন বল কে সে মেয়ে। আমি দেখতে চাই ঐ মেয়ে আমার থেকে কতো ভাল।
- ঐ মেয়ে তোর থেকে অনেক সুন্দর।
- আমাকে দেখা ঐ মেয়েকে।
- হুমম দেখাবো। তবে আগে চোখ বন্ধ কর।
- আচ্ছা করলাম।
- আমি না বলা পর্যন্ত চোখ মেলতে পারবিনা কিন্তু ।
- আচ্ছা ঠিক আছে ।
.
তার চোখে হাত দিয়ে রুমে নিয়ে গেলাম। তার চোখের পানিতে মেকাপ নষ্ট হয়ে গেছে।
.
- কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
- ঐ মেয়ের কাছে ।
.
ড্রেসিংটেবিলের সামনে নিয়ে গেলাম তাকে। আর তাকে বললাম চোখ মেলে যাকে দেখতে পাবি সেই হচ্ছে ঐ মেয়ে। আর সে তোর থেকে অনেক বেশি সুন্দর। যদিও কান্না করে মেকাপ নষ্ট করে ফেলেছে। আর আমি তাকে অনেক বেশি ভালবাসি। প্লীজ আমাকে একটু সাহায্য করিস প্লীজ। বলেই হাতটা নামিয়ে নিলাম।
.
পরে সে চোখ মেললো। আয়নাতে তাকেই দেখা যাচ্ছে। সে আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো রুমে কিন্তু আমি আর সে ছাড়া কাউকেই দেখতে পেলো না।
.
- কি এইবার দেখেছিস আমার ভালবাসার মানুষটিকে?
- না পাই নাই তো।
- চোখ মেলে প্রথম কাকে দেখতে পেয়েছিস??
- আয়নার সামনে তো আমাকেই দেখতে পেলাম।
- তাহলে সেই মেয়েটা তুই ।
- সত্যি??
- হুমমম সত্যি।
.
এইবার আবারো কেঁদে দিলো কিন্তু এই কান্নাটা সুখের কান্না।আমি পকেট থেকে টিস্যু বের করে তার চোখের পানি মুছে দিলাম।
.
- আমাকে সত্যি ভালবাসিস?
- হুমমম বাসি। কেনো তুই বাসিস না?
- মাইর খাবি কিন্তু এখন ।
- আর শোন এখন থেকে তুমি করে বলবি।
- আচ্ছা তুই ও,, না তুমিও তুমি করে বলবে।
- আমার মুখ দিয়ে বের হবে না। তবে চেষ্টা করবো বলার।
- আচ্ছা ঠিক আছে। আই লভ ইউ।
- আই লভ ইউ টু।
.
আমাকে জড়িয়ে ধরে সাথে সাথে। ইশশ কতো যে ভাল লাগছিলো তখন বলে বুঝানো যাবে না। ভালবাসার মানুষটি সাথে থাকলে কখনো মন খারাপ থাকেনা। আজ বিষন খুসি আমি। সুবর্ণা তো আমাকে জড়িয়ে ধরেই ছিলো। সুবর্ণাও বিষন খুশি।
.
.
🔸চলবে🔹

Comments