বউয়ের জ্বালা \ শেষ পর্ব /

    


- হ্যালো আসসালামু ওয়ালাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। কেমন আছো? আলম!
- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ্‌। কিন্তু আপনি কে?
- আমাকে ভুলে গেলে? আমাদের এত বছরের রিলেশনের কথা মাত্র কয়েকটা দিনেই সব কিছু ভুলে গেলে কিভাবে?
- আজব তো কে আপনি? আফা দয়া করে মজা কইরেন না। পরিচয়টা দিন।
- ছিহ প্রেমিকাকে কেউ আফা বলে?
- উফফফ।
- কি ব্যথা লাগলো?
- বইন আমার। আপনি আমার ধর্মের বইন। একটু বলবেন দয়া করে কে আপনি। এমনিতেই প্যারার উপরে আছি। আর জ্বালা দিয়েন না।
- হাহাহা। কিসের প্যারা জানু?
.
বিছানার এক সাইডে বসা ছিলাম। কখন যে দিয়া রুমে এসেছে তাও খেয়াল করিনি। আমার সব কথা দিয়া শুনে ফেলে। হঠাৎ কেনো জানি বিছানা থেকে উঠে বেলকোনিতে যাওয়ার জন্য দাঁড়ালাম আর তখনই দিয়াকে দেখতে পেয়ে খুব বড় ধরনের একটা শক খেলাম। সাথে সাথে কান থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেললাম। এইদিকে তো দিয়া সব কিছু শুনে ফেলেছেই।
.
- কি হলো কথা বলেন। আমাকে দেখে কথা বলা বন্ধ করলেন কেনো?
- আল্লাহ্‌র কসম। আমি তাকে চিনিনা। হয়তো কেউ মজা করছে।
- একদম চুপ। যা বুঝার আমি বুঝেছি। আমাকে আর বুঝাতে হবে না। 
- বিশ্বাস করেন। সত্যি করে বলতেছি আমি চিনি না। 
.
চোখ গুলো বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো দিয়া। তারপর দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে রুম থেকে চলে গেলো । মেজাজটা আমার পুরাই গরম হয়ে গেলো। মোবাইলের স্ক্রিনটা অন করে দেখলাম কলটা এখনো কাটেনি। মনে মনে খুব রাগ হচ্ছিলো। তাই সব রাগ এখন মোবাইলের ঐ পাশের মানুষের উপর দেখাবো। মোবাইলটা কানের কাছে নিতেই। ঐ পাশ থেকে হাসির শব্দ শুনতে পেলাম।
.
- ঐ কে আপনি বলবেন নাকি এখন মুখের ভাষা খারাপ করবো?
- শোন শোন। বলতেছি আগে একটু হেসে নেই। হাহাহাহা। 
- মানে? এই হাসি বন্ধ করেন।
- আলম কুত্তা। তুই আমাকে চিনিস না? আমি রিয়া। 
- রিয়া? ও গোড। তুই? শয়তান তুই তখন এভাবে কথা বলছিলি কেনো? আর এই নম্বর কার?
- এটা আমার জামাইর নম্বর। কেমন দিলাম? আর শোন মেয়েটা কে ছিলো? কার সাথে এতক্ষণ কথা বলছিলি?
- কেউ না। এই কথা বাদ দে। আগে বল তোর কি খবর? কেমন আছিস?
- হুমম দোস্ত খুব ভাল আছি। তুই কেমন আছিস?
- ভাল আর আমার পক্ষে মনে হয় থাকা হবে না।  
- কেনো কি হয়েছে? সব কিছু খুলে বল আমাকে। 
- থাক বাদ দে।
- বলবি না? আজ সকালে কিন্তু আন্টির সাথে আমার কথা হয়েছে। আন্টি আমাকে সব কিছুই বলেছে। 
- তুই ও জেনে গেছিস? তাহলে আর নতুন করে কি বলবো।
- আমার মতে যেটাই হয়েছে তোর সাথে। তোর ভালোর জন্যই আংকেল- আন্টি করছেন।
- লেকচার বন্ধ কর। আমি এই প্যারার কথা আর মনে করতে চাচ্ছি না। শুনেছিসই তো একটু আগে কি একটা প্যারা নিচ্ছিলাম। 
- আরে গাধা ঐটা প্যারা না। ঐ টা তোর বউয়ের তোর প্রতি ভালবাসা ছিলো। আমিও তো প্রথম প্রথম আমার জামাইর সাথে এরকম করতাম। কিন্তু এখন অনেক বদলে গেছিরে। এখন দু'জন দু'জন'কে ছাড়া কিচ্ছুই বুঝিনা। দেখবি তোদেরও এরকম হবে। 
- ধ্যাত তোর সাথে কথা বলে আরো বেশি প্যারা লাগতেছে। রাখলাম ফোন।
.
রিয়া হচ্ছে আমার কলেজ ফ্রেন্ড। খুব ভাল ফ্রেন্ড ছিলাম আমরা। প্রায়ই চার বছরের দূরত্বে তেমন কন্টাক্ট হয়নি তেমন। কিন্তু দিয়া যে ভুল বুঝলো সেটা কিভাবে ঠিক করবো। তখন সেটাই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। কোনো কিছুই ভাবনায় আসছিলো না। একটা পর্যায় দিয়া'কে খুঁজতে গেলাম। কোন রুমে আছে সেটাও তো জানিনা। রুম থেকে বের হয়ে টিভির রুমে গেলাম। কিন্তু সেইখানে দেখতে পেলাম না। তারপর মাথায় আসলো টয়া কে কল দিয়ে দেখি কিছু জানতে পারি কিনা।
.
- টয়া। কোথায়রে?
- ভাইয়া আমি তো ছাদে।
- ছাদে কি করিস?
- এমনি বসে আছি ভাবির সাথে।
- দিয়া তোর সাথে?
- হ্যা ভাইয়া ভাবি তো আমার পাশেই।
- আচ্ছা আম্মা তোকে ডাকে বাসায় আয়।
- আচ্ছা আসছি।
.
আমি তাড়া-তাড়ি ছাদে উঠে যাই। ছাদে উঠার সময় সিড়ির মধ্যে টয়ার সাথে দেখা হয়। টয়াকে তো মিথ্যে কথা বলে বাসায় যেতে বলেছি। আমাকে দেখে টয়া বলে।
.
- তুমিও ছাদে যাবে ভাইয়া?
- আরে না ছাদে যাবো না। তুই যা আম্মা ডাকছে।
- আচ্ছা আমি শুনেই আসতেছি ছাদে।
- আচ্ছা যা তাড়া-তাড়ি।
.
ছাদে উঠলাম। দিয়াকে দেখতে পেলাম দোলনায় বসে আছে। তখনও সে আমাকে দেখতে পায়নি। আমি তার সামনে যাওয়ার পর আমাকে দেখতে পায়। আমাকে দেখে দোলনা থেকে উঠে যায়। বাসায় চলে যাচ্ছিলো। আমি ডাকলাম কিন্তু আমার কথা শুনেছিলো না। তাই বাধ্য হয়ে তার হাতটি ধরে ফেলি।
.
- প্লিজ একটু শুনেন। কিছু কথা বলার ছিলো।
.
 দিয়ার হাতটি ধরার পর দিয়া একটু লজ্জ্বা পেয়ে যায়। ওর লজ্জ্বাময় চেহারা দেখে আমি সাথে তার হাতটি ছেড়ে দিলাম। তারপর আবারও দোলনায় গিয়ে বসে। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম তার সামনে। তারপর সব কিছু ভেঙ্গে বললাম। রিয়ার সাথে কথাও বলে দিয়েছি। সবশেষে দিয়ার ভুল ভাবনাটা তার মন থেকে দূর করতে পেরেছি।
.
দিয়া দোলনার এক সাইডে একটু চেপে বসে। আমার মনে হচ্ছিলো হয়তো আমাকে বসার জন্যই সাইডে চাপে। কিন্তু বুঝেও না বুঝার বান ধরে ছিলাম। কারণ আমি তো তার মুখে শুনতে চাচ্ছিলাম যেনো সে বলে আমাকে সেইখানে বসার জন্য। কিন্তু বলেনি। ঠিক ঐ ভাবেই বসে বসে আমার মোবাইলে কি জানি দেখছিলো।
.
- আমি কি দাঁড়িয়ে থাকবো?
- কেনো দাঁড়িয়ে থাকলে কি হবে? 
- না কিছু হবে না। আচ্ছা মোবাইল দেখা হয়েছে? আমি কি এখন আমার মোবাইলটা আমার কাছে  পেতে পারি।
- জ্বি না। আজকে এই মোবাইল আমার কাছে থাকবে।
- তাহলে আমি একা একা কি করবো?
- যা ইচ্ছে করেন। 
- উফফ। পা ব্যথা হয়ে গেলো দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে। 
.
কথাটি বলেই তার পাশে গিয়ে বসলাম। দুইজনই চুপ-চাপ বসে আছি। না শুধু আমিই বসে ছিলাম। আর সে আমার মোবাইল টিপতেছিলো। প্রায় ২০ মিনিট চুপ করে থাকার পর। আমিই সেধে সেধে কথা বললাম।
.
- আচ্ছা কেমন আছেন?
- আপনার কি মনে হয়? <চোখটা কিরকম যেনো করে কথার রিপ্লাই দিলো>
- আমার তো কত কিছুই মনে হচ্ছে। কিন্তু সব তো আর ঠিক হবে না।
- তো শুনি কি কি মনে হচ্ছে?
- বলবো?
- হুমম।
- আসলেই বলবো?
- হুমমমম।
- থাক না বলি।
.
- ধ্যাত আমি একা একাই কি কথা বলবো? আপনিও তো কিছু বলতেও পারেন। 
- আমার না খুব পানি পিপাসা পেয়েছে। একটু পানি নিয়ে আসবেন বাসা থেকে?
- আর কত ছাদে থাকবেন চলেন বাসায় যাই। তারপর পানি খেয়েন।
- নাহ। থাক লাগবে না।
.
একটু পর দোলনা থেকে উঠে নিচে নামলাম। মোবাইলটাও তো তার কাছেই ছিলো। তা নাহলে তো টয়াকে কল করে বলতে পারতাম পানি নিয়ে আসার জন্য। বাসায় গেলাম। বাসায় গিয়ে টয়াকে পেলাম না। মা'কে জিজ্ঞাসা করলাম। মা বললো গোসল করতেছে। কিছুক্ষণ পর মা'কে বললাম পানি দেওয়ার জন্য। মা গ্লাসে করে পানি দিলো। মা ভাবছিলো আমি খাবো তাই গ্লাসে করেই পানি দিয়েছিলো। কিন্তু পরে বললাম যে বোতলে পানি ভরে দেওয়ার জন্য। কিন্তু শুধু বোতলটা হাতে দিয়ে বলে পানি ভরে নে। কি আর করার পানি ভরে ছাদে নিয়ে গেলাম। 
.
- এই নিন।
- থ্যাংকস।
- আমি রুমে যাচ্ছি। আমার ঘুমাতে হবে।
- রাতে ঘুমিয়ে এখন আবারও ঘুমাতে যাচ্ছেন? 
- কী ঘুমটাই না হয়েছিলো। 
- ঠিকই তো আছে। 
- চলে যাচ্ছি?
- যান।
.
 সিড়ির সামনে চলে আসি। দিয়া আবার ডাক দিলো। তার সামনে গেলাম।
.
- এটা একটু নিয়ে যান।
- দিয়ে গেলাম এখন আবার নিয়েও যেতে হবে?
- এমন করেন কেনো? আচ্ছা যান নিতে হবে না। 
.
কথা বলতে বলতে টয়া এসে হাজির। 
.
- ভাইয়া তুমি মিথ্যে কথা বলে আমাকে নিচে নামিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে ভাবির সাথে প্রেম করছো?
- কই না তো। 
- বুঝেছি বুঝেছি। আচ্ছা শোনো নিচে যেতে বলেছে তোমাদের।
.
নিচে নামতেছিলাম টয়া আমাদের সামনে ছিলো। সিড়ির কাছা-কাছি এসে দিয়া বোতল দিয়ে আমার হাতে আসতে করে লাগালো। এবং ইশারা দিয়ে বলে বোতলটা নেওয়ার জন্য। বোতলটা হাতে করে নিয়েই নিচে নামলাম। দুপুরের খাওয়া শেষ করলাম। খেয়ে আমি রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। ঠিক বিকেল ৫ টায় ঘুম থেকে উঠলাম। এর কিছুক্ষণ পরেই মাগরিবের আযান দিয়ে দিলো। দিয়া মাগরিবের নামাজ পড়তেছিলো। পরে জানতে পারলাম দিয়া ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। এবং ঐ দিন ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে উঠে তারপর দেখে আমি ফ্লোরে বসে ঘুমাচ্ছিলাম। সে দেখে বিছানায় শুইয়ে দেয় আমায়।
.
বিষয়টা শুনে দিয়ার প্রতি কিছুটা ভালবাসা বেড়ে যায়। একটা সময় তাকে ভালবেসে ফেলি আমি। কিন্তু একটা জিনিষ বুঝতে পেরেছি যে বউয়ের জ্বালানো গুলো অনেক মিষ্টি। কেনো যে মানুষ এই মিষ্টির স্বাধ নিতে চায় না। আমিও তো প্রথমে নিতে চাইতাম না। কিন্তু এখন তো খুব সুখে আছি। 
.
দেখতে দেখতেই আমার আর দিয়ার বিয়ের বয়স ১ বছর হয়ে যায়। এই একটা বছরে যতই খুনসুটি আর ঝগড়া হয়েছে সেটা বেশিক্ষণ আমাদের মধ্যে থাকতে পারেনি। অল্প কিছুক্ষণের জন্যই ছিলো আমাদের মাঝে। কিন্তু যেটা আমার জন্য অসম্ভব ছিলো সেটা এখন সম্ভব হয়েছে। যেমন আমি আগে স্মোক করতাম। কিন্তু আমার বউয়ের কথা শুনতে শুনতে এখন একেবারেই ছেড়ে দিয়েছি। আসলেই চাইলে সবই সম্ভব শুধু সব কিছুর ভালো দিকের জন্য লাগে কেউ একজনকে। আর সে যদি মনের ভাষা বুঝতে পারে তাহলে আপনি সব দিক থেকেই সুখি।
.
- এই উঠো তাড়া-তাড়ি। ফজরের আযান দিচ্ছে। উঠো।
- আর একটু ঘুমাই না।
- না আর এক সেকেন্ডও না। উঠো বলছি। সত্যি করে বললাম এখন না উঠলে গায়ে পানি ঢেলে দিবো।
- প্লিজ।
- উঠবা না তো? আচ্ছা ঠিক আছে।
.
সাথে সাথে তার হাতটি ধরে বুকে টেনে নিয়ে তার কপালে চুমু একে দেই। এভাবে ভালবেসেই যেনো বাকিটা জীবন কেটে যায় সবাই দোয়া করবেন। আল্লাহ্‌র রহমতে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি। আমরা ভাল আছি। কিন্তু কিছু জ্বালানো তো আছেই। এইতো সেইদিন রাত ৩ টায় ঘুম ভেঙ্গে যায় দিয়ার। তার ঘুম ভেঙ্গে গেছে তার মানে আমাকেও তার সাথে বসে কথা বলতে হবে যতক্ষণ না তার ঘুম আসে। রাত তিনটায় বায়না ধরে ছাদে যাবে। কি আর করার ছাদে নিয়ে গেলাম। ছাদে গিয়ে ভয় দেখিয়ে রুমে নিয়ে আসি। রুমে এসে আবারো ঘুম। 
.
জীবনের গল্প কখনো লিখে শেষ করা যায় না। ঠিক তেমনি করে ভালবাসাটাও সবসময় প্রকাশ করা যায়না। 
.
.
((সমাপ্ত)) 
.
লেখাঃ হৃদয় নাদিম

Comments